আজ চোদ্দমাস হতে চললো পেপার মিলের কর্মীরা মাইনে পায়না। অন্নচিন্তা চমৎকারা। চোদ্দমাসের কপর্দক শূণ্যতা সহস্রাধিক সংসারকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জনপদ ধ্বস্ত। রাঙা অধর নয়ন কালো, ভরা পেটেই লাগে ভালো। এত দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরচূর। এক্সোডাস শুরু হয়ে গেছে। এই অশণি সংকেত সূদূর কল্পনাতেও ছিল না কাগজকল ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদের। উজার করে তারা ভোট দিয়েছে, ক্ষমতায় এনেছে বিজেপিকে। তারপরই বন্ধ হয়ে গেল পাঁচগ্রামের মিল কর্মীদের মাসমাইনে। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি, তারপর আশার ছলনে ভুলি....। শুধু কর্মহীন স্টাফদের হিসেব নিলে চলবে? ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছে আরও সহস্রাধিক। তাদের উপার্জন বন্ধ ষোল মাস। তাদের ঘিরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য দোকানী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এক্সোডাস, এক্সোডাস। রোজ শোনা যাচ্ছে মিল বিক্রী হয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট চত্বরে। তারা যে পুরোনো কর্মীদের বহাল রাখবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর সরকারের হাতে মাসমাইনের টাকাটুকুও নাকি অবশিষ্ট নেই। কিন্তু নমামি বরাক নদী উৎসব? সেটি কীভাবে সম্পন্ন হবে? ... ...
শত শত বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে তাদের মধ্যে এসব স্বভাব প্রবিষ্ট হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের কর্তব্য ছিল তাদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় পারদশী করে গড়ে তোলা। কিন্তু ঐতিহাসিক বিদ্বেষবশত তারা তা করেনি। ফলে একটা পর্যায়ে এসে এই ‘একটা অংশ’ রোহিঙ্গা তাদের জন্য বোঝা বা জঞ্জাল হয়ে দাঁড়ায়। এই অংশের দায়ভার পড়ে যায় গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এই ‘জঞ্জাল’ সাফ করতে তারা শুরু করে গণহত্যা। এটা তাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কালিমা কোনোদিন তারা মুছতে পারবে না। ... ...
সেই কালো সময়ের উপরে লজ্জা লিখে লজ্জা পেয়ে দেশ ছাড়তে হয়ে ছিল তসলিমা নাসরিনকে। সেখানেও এমন এক পরিবারের কথা বলা হয়েছিল যারা শত বাধা পেরিয়েও দেশ ত্যাগ করে না। বাড়ির প্রধান একজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাও। নিজের মেয়েকে যখন ধর্ষণ হতে দেখে তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দেশ কাকে বলে তা নিয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়ায় তারা। আমরা ভদ্রলোক মানুষ, আমরা এই সব নষ্ট কথা আমরা আমাদের সাহিত্যে মেনে নিতে পারি না। লজ্জা আসলে কার এই রকম একটা কঠিন প্রশ্ন সহ্য করা আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। লজ্জা যখন বলে - “ধার্মিকেরা কি কখনও পারে বিধর্মীর সম্পদ লুট করে নিজের ধর্ম রক্ষা করতে? এতো আসলে ধার্মিকের কাজ নয়। এ হচ্ছে গুণ্ডা বদমাশের কাজ।” তখন সম্ভবত কোন উত্তর থাকে না জিহাদি জুলুসে জ্বলতে থাকা আমার ভাইয়েদের কাছে। আর তাই দেশ থেকে বাহিরে তসলিমা। ... ...
১৯৪৮ সালে বার্মা আবার বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রোহিঙ্গারাও এই স্বাধীনতা আন্দোলনে জেনারেল অং সানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বর্মীবাহিনীর মধ্যে থেকে যায় সেই পুরনো ক্ষোভ―রোহিঙ্গারা একদা বৃটিশদের সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সাময়িকভাবে মগ-রোহিঙ্গা দূরত্ব কমে এলেও স্বাধীনতার পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দূরত্বের কারণ সেই পুরনো ক্ষোভ। ১৯৪৭ সালে নতুন শাসনতন্ত্রিক পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রণীত ভোটার তালিকায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদগুলোকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আবারও শুরু হয় সংঘাত। ১৯৪৮ সালে আবারও রোহিঙ্গারা হত্যাকা-ের শিকার হয়। ... ...
...রোহিঙ্গারা কিন্তু আরাকানের আদিম জনগোষ্ঠী নয়। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে মারু ও কামরাজগজি বংশ স্বাধীনভাবে আরাকান শাসন করে। ১৪৬ বা ১৫১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মগধ থেকে আগত চন্দ্র-সূর্য নামক এক সামন্ত সৈন্যবাহিনী চট্টগ্রাম ও আরাকানে বসবাসকারী আদিম জাতির সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে সেখানে নতুন রাজ্যের গোড়া পত্তন করে। মগধ থেকে আগত হিন্দু ও বৌদ্ধ সেনারা নতুন রাজ্যের আদিম অধিবাসীদের আর্য ধর্ম-দর্শন-সংস্কৃতি ও ভাষালিপিতে শিক্ষিত করে তোলে। কালক্রমে চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্ম-সংস্কৃতি এবং আরাকানে বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়। ... ...
৭১ এ যে নারীরা ধর্ষিত হয়েছিল তারা তো সম্মান হারায় নি বরং তারাই সম্মানিত, তারাই আমাদের গর্বের প্রতীক। তারা বীর। এই বীরদের ইজ্জৎ হারানো নারী উপস্থাপন করে তাদের কি অসম্মানিত করা হচ্ছে না? ইজ্জৎ তৈরি হয়, মেধায় শ্রমে, মানুষের কর্মে। শরীরে কিংবা মনে আঘাত লাগলে কারও ইজ্জৎ যায় না । বরং ইজ্জৎ যাবে আঘাতকারীর । তার জঘন্য কর্মের জন্য সে সমাজে বেইজ্জত হবে। তাই প্রতিটা পাকি ধর্ষকদের ইজ্জৎ গেছে। এইগুলাই ইজ্জৎ হারানো নষ্ট, ভ্রষ্ট অমানুষ। ... ...
১,১০০ জনে্র মৃত্যুর মিছিল, ধসে পড়া ভবনের ধ্বংস স্তুপের মধ্যে চাপা পড়া হাজার হাজার মানুষের বাঁচার হাহাকার, এরই মধ্যে নতুন দুটি প্রাণের জন্ম-মৃত্যু, হাজার নিখোঁজ আপন জনদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি, টানা সাত-আট দিন ধরে জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে পতিত এইসব মানুষের প্রাণ বাঁচাতে শত শত মানুষের প্রাণান্তকর লড়াই এবং শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষকে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার মানবিক জয় বাংলাদশে এক দুঃসহ-মর্মান্তিক স্মৃতি হিসেবে জিয়ে থাকবে বহুদিন। ... ...
জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
বাবা একদিন মরে পরে রইলেন চেয়ার মধ্যে। যে কাঠের চেয়ারটায় রোজ বসে থাকতেন বারান্দা, একদিন দেখা গেলো মাথাটা হেলে আছে চেয়ারের কাধে, মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে…। খুব বড় আয়োজন করে বাবার কুলখানি করলেন বড় ভাই। আমাদের ডালডা আর তেলের কারখানাটা বড় ভাইই চালান। ভাবী আমাদের এখানে থাকতে চান না বলে উত্তরায় ফ্ল্যাট কিনে ভাই-ভাবী সেখানেই থাকেন। এই বাড়িতে এখন আমি একা। পুরো একটা বাড়িতে একা থাকতে আমার একটুও একা লাগে না। কেন লাগে না জানি না। স্বপন যে ঘরটাতে ফাঁস দিয়েছিল সেঘরটা তালা দেয়া থাকে। মাঝে মাঝে খুলে ভেতরে ঢুকি। চেষ্টা করি স্বপনের কোন অস্তিত্ব অনুভব করতে। আজ ২২ বছর স্বপন নেই! মণীশ জ্যাঠার যেমন বয়স আটকে আছে মহাকালের ফ্রেমে, স্বপনও সদ্য যৌবনের চেহারা নিয়ে এ্যালবামে আটকে আছে। কি অদ্ভূত, মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া আজো কাটাতে পারলেন না কিন্তু স্বপনকে কতদিন প্রত্যাশা করেছি শুধু একবার দেখবো…। কিন্তু স্বপন যে দূর কোন দেশের অধিবাসী। স্বপন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি…। ... ...
তো, আমারো কি এখন থেকে পরিবারের কথা মেনে সাবধান হওয়া উচিৎ? আমাকে কতল কাল কখন, কোথায় হবে? ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার সময় রাতের বেলা গলির মুখে কি ঘাপটি মেরে থাকবে কোনো মৌলবাদের নাতি? নাকি সকাল, সকালই নূরানী লেবাসের চাপাতিতন্ত্র বাসার সামনে ঝাপিয়েঁ পড়বে আমার ওপর? অথবা তারা আমার শোবার ঘরেই সদলবলে ঢুকে কুপিয়ে জিহাদ কায়েম করে গেল, এমনো তো হতে পারে? তারা আমার গলা কাটার আগে আমি কি তাদের মুখগুলো একনজর দেখার সময় পাবো? আর অনিবার্য প্রশ্ন এই, তখন কি হবে আমার অনুভূতি? ... ...
আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর। ... ...
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো? হ্যালো... ... ...
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন। আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে। ... ...
জনজাতিদের অবস্থাও যে খুব ভালো তা নয়। এরাও অতিদরিদ্র। ইতিহাসের দীর্ঘ পর্যায় জুড়ে এরা যেমন বাংলাদেশে, উত্তরবাংলাতে তেমনি অসমে বা পূর্বোত্তরেও নানা ভাবে বঞ্চিত। কিন্তু এখানে ‘কিন্তু’ আছে। এখানে হাজার রকমের জনজাতি বাস করেন। এদেরই মধ্যে আপাত সংখ্যাতেবেশি যারা তাদের সঙ্গে আপোস করে শাসনের সহযোগী করে নেবার চাল চিরদিনই চালিয়ে গেছে ভারতীয় বা স্থানীয় বর্ণহিন্দু শাসক শ্রেণি। তাই ইতিমধ্যে গড়েউঠা বহু জনজাতীয় রাজ্যেই ছোট জনজাতীয়দের দাবিয়ে রাখার কাজ বড়ো জনজাতীয়রাই করেন। যেমন কোচেদের জনজাতি বলে কোনো স্বীকৃতি নেই। এই দাবী জানালে বডোরাই এর বিরোধিতা করেন। বডোদের স্বশাসন দিয়ে তাদের শাসনের সহযোগী করে ফেলা হয়েছে। যেমন গোর্খাল্যাণ্ডে গোর্খাদের সহযোগী করে লেপচা ভুটিয়াদের দাবিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত জনজাতীয় এবং সংখ্যালঘু ঐক্য যাতে না গড়ে উঠে এটা ভারতীয় শাসক শ্রেণি সুকৌশলে সুনিশ্চিত করে। বাঙালি-বিহারি-মারাঠি-গুজরাটি-অসমিয়া বর্ণহিন্দু শ্রেণিটি এই সুকৌশল খুবপছন্দ করেন। গোটা পূর্বোত্তরে প্রায় সমস্ত জাতি জনজাতিদের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ছিল বা আছে। ব্যতিক্রম কেবল বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। কিন্তু মুসলমানের বিরুদ্ধে টানা প্রচার আছে এরা আই এস আই-এর হয়ে কাজ করে, উগ্রপন্থীদের মদত দেয় ইত্যাদি। এগুলো মিথ্যাচারীদের প্রচার মাত্র। মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাও এই সব প্রচারে তথ্য যোগায়। কিন্তু আজ অব্দি এদের বডো ডিমাছা মণিপুরি নাগা উগ্রপন্থীদের মতো সংগঠিত রূপে দেখা যায় নি। গেলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য অনেক সংগঠনকে যখন ভারত সরকার আলোচনার টেবিলে নিয়ে এলো তাদেরও আনতে পারত। আর পারে নি বলে বাংলাদশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো অভিযোগ জানিয়েছে বলেও জানা যায় নি। অথচ ওদিকে ওদেশের সঙ্গে ঘনঘনই তো ভারত এবং অসম সরকারের কথা হচ্ছে। মুসলমানেরা যাদের থেকে মার খান তাদের কেন মদত দিতে যাবেন? কিন্তু কেবল বিজেপি নয়, বহু বামেরাও এই প্রচারে সিদ্ধহস্ত। প্রচার মাধ্যমের কথা তো বলেই লাভ নেই। অসমেআলফা এন ডি এফ বি- যখন গোলাগুলি ইত্যাদি করত তখন বহু হিন্দু বাঙালি 'ভদ্রলোক'ও বলে বেড়াতো এগুলো মুসলমানের কাজ। ... ...
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিবেশ জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সিকিমবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পশ্চিম বাংলা, আসামেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিকর এসব বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে। গনসংহতি আন্দোলন সহ বাংলাদেশের বাম মোর্চা গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৪ তিস্তার পানির দাবিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দোয়ানি পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিস্তা নিয়ে উদ্ভুত এই সমস্যা একা বাংলাদেশের মরুকরণ বা খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা নয়, কিংবা পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের সমস্যা নয়। অথবা এককভাবে তা সিকিমের আদিবাসী, সাধারন মানুষদের জীবন, জীবিকা, ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামও হতে পারেনা। ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। ফলে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের এই সংগ্রাম সিকিম, পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ সহ সকলের। ... ...
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে। ... ...
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি? ... ...
শাহবাগের মোড়– প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনটি একটি বারুদের স্তুপে স্ফুলিংগ সংযোগ সূচনায় গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন । সেখান থেকে গণজাগরণ, গণ বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণদের আহ্বানে খুব শিগগিরই এতে ব্যপক সাড়া মেলে; কারণ সচেতন নাগরিকরা কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ জামাত নেতার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারেননি। তরুণরা এই আন্দোলনটিতে পথ দেখালেও শিগগিরই ছাত্র-জনতা সকলেই এতে যোগ দেন; দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গণদাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জনমত তৈরি হয়, শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি –ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনটি দানা বাঁধে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী, বাঙালি ও সমমনারাও খুব শিগগিরই ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধ বিরোধী আন্দোলনটির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করতে থাকেন। এই নয়া বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ হয়ে শাহবাগের চেতনা ছড়াতে থাকে দেশে দেশে। ... ...
যারা বোরো রাজনীতির হাল হকিকৎ সম্বন্ধ ওয়াকিবহাল আছেন তারা সবাই জানেন কী ভয়ানক রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র ছিলো এই রাজনীতি। বহু মধ্যপন্থী বোরো নেতাকে সরাসরি মেরে ফেলা হয়। বোরোলিবারেশন টাইগার(বিটিএল), (যেটির নেতৃত্বে ছিলেন এই মোহিলারিই, পরে অব্শ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে দেন)। বা আগেকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ড(এন ডি এফ বি) - এই দুই দলের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে বহুজন হতাহত হন। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অবাধ জোগান এইসব আন্দোলনকে খুব সহজেই হিংসাত্মক করে তুলেছিল। এই হিংসা ও খুনোখুনির রাজনীতি বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলে চলে আসছে, এমন নয় যে শুধু "অনুপ্রবেশকারী"দের সাথেই প্রথম এখানে হিংসার রাজনীতি পা রাখল। ... ...
আর এই "বেআইনী বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ" এর মিথকথা তৈরী হওয়ার আগের থেকেই শুরু হয়েছিলো আরেকটি শয়তানী গল্প - সেটি হচ্ছে "বহিরাগতদের" চাপে বিলীয়মান 'স্থানীয়' মানুষদের কথা। এর জন্য মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা নয়, অন্য প্রদেশের হিন্দু যারা অসমে বসবাস শুরু করেছিলেন তারাই ছিলেন সেই আক্রমণের শিকার। না, জমির দখল নিয়ে সেই আন্দোলন ছিল না। সেটি দাঁড়িয়ে ছিল যে ভুল ভাবনার উপর সেটি হচ্ছে এই বাঙালি মধ্যবিত্তদের চাপে অহমিয়ারা তাঁদের জাতি পরিচয় ভুলে যাচ্ছেন। তাঁরা সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন না এবং স্থানীয় লোকেদের জন্য যে সুযোগ বা উপকার ছিলো সেগুলিও তাঁরা ভোগ করতে পারছেন না। আর এর ফলে ১৯৬০ সালে যা বঙাল খেদা আন্দোলন হয় তা শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বানানো কাহানীর ফল। ... ...